সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করল দুদক
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

আদালতের আদেশ অমান্য করায় বিচারকের কারাদণ্ড

আদালতের আদেশ অমান্য করায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) সোহেল রানাকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাঁকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মাসুদ হাসান দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে  জরিমানার এ অর্থ সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার জন্য বলেছেন আদালত।

রায়ের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। সোহেল রানা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন।

আদালতে আজ আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়। সোহেল রানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ্‌ মনজুরুল হক।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিচারকের আইনজীবী শাহ্‌ মনজুরুল হক জানান, একটি ক্রিমিনাল মামলা ৫৬১এ -তে স্টে (স্থগিত) ছিলো। হাইকোর্ট থেকে স্টে থাকা অবস্থায় কুমিল্লার (তৎকালীন) সিজেএম সোহেল রানা সাহেব ওই মামলায় চার্জ ফ্রেম (অভিযোগ গঠন) করেন।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট স্থগিতাদেশের বিষয়টি উনার রেকর্ডে থাকা সত্ত্বেও তিনি শুধু চার্জ ফ্রেমই করেননি বরং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা সহ আরো কিছু আদেশ দেন।

‘পরে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে বিচারক সোহেল রানার ব্যাখ্যা তলব করেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে ব্যাখা দেন ওই বিচারক। তবে তাঁর ব্যাখ্যা আদালতের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।’

অ্যাডভোকেট শাহ্‌ মনজুরুল হক বলেন, এ অবস্থায় হাইকোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। রুলের প্রেক্ষিতে আদালতের কাছে নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, স্থগিতাদেশের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তিনি (বিচারক সোহেল রানা) চার্জ গঠনসহ অন্যান্য আদেশ দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। এছাড়া দাখিল করা ব্যাখ্যায় তাঁর শব্দ চয়ন আদালতের ডিগনিটি ও প্রেজিস্টের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় তাঁর নিঃর্শত ক্ষমা গ্রহণযোগ্য নয়।

ফলে তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে হাইকোর্ট তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে আদেশ দেন বলে জানান আইনজীবী শাহ্‌ মনজুরুল হক।

ঘটনার পূর্বাপর

আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়।

মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।

এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন।

গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন।

তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন।

হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন।

আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা গ্রহণ না করে হাইকোর্ট আজ কারাদণ্ডের আদেশ দেন।