প্রাককথন
সাক্ষ্য মূলত দুই প্রকার; মৌখিক সাক্ষ্য ও দালিলিক সাক্ষ্য। ২০২২ সালে সাক্ষ্য আইন সংশোধনের মাধ্যমে ডিজিটাল সাক্ষ্যকে দালিলিক প্রমাণের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা সংশোধন করে ডকুমেন্টস শব্দের সঙ্গার মধ্যে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক রেকর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাক্ষ্য আইনে একটি যুগান্তকারী পরির্তন এসেছে মিসেস খালেদা জিয়া বনাম রাষ্ট্র, ১৯৮৫ বিএলডি, ৩০৩ মামলায় যেখানে ভিডিও ক্যাসেটকে ডকুমেন্টের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে মামলার সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। Authentic (সত্য), complete (সম্পূর্ণ), untainted (নকল) নয় এবং ফরেনসিক প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত সাক্ষ্যকে ডিজিটাল সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৩, ১৭, ২২ক, ৩৪-৩৯, ৪৫, ৪৭ক, ৬৫ক, ৬৫খ ৬৭ক, ৮১ক, ৮৮ক, ৮৮খ, ৮৮গ, ৯০ক ধারায় ডিজিটাল সাক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। জেনারেল ক্লজেজ এক্ট এর ধারা ৩(১৬) এবং পেনাল কোডের ধারা ২৯ ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ডিজিটাল সাক্ষ্যকে যেহেতু নথি হিসেবে গ্রহণ করার বিধান সাক্ষ্য আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধির এর ১৬৫ ধারা এবং ১৬১ ধারানুসারে তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার প্রয়োজনে নথিতে যে কোন সাক্ষ্য সংযুক্ত করতে পারে। আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ৯৪ ধারানুযায়ী নথি তলব করতে পারে, সাক্ষ্য আইনের ১৬১ এবং ১৬৫ ধারানুযায়ী প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র তলব করতে পারে এবং ৯৬, ৯৮, ৫২৩ এবং ৫৪০ক ধারা প্রয়োগ করে আলামত জব্দ করতে পারে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১০২-১০৫ প্রয়োগ করে ও নথি অনুসন্ধান করা যায়। উক্ত ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদালত ডিজিটাল নথি তলব ও জব্দ করতে পারে ।ডিজিটাল নথির সাথে সাধারণ নথির মধ্যে বাস্তবিক ব্যবধান থাকায় ডিজিটাল নথির সঠিকতা নির্ণয় অপরিহার্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২০ এর বিধি ১৩ ভঙ্গ করে সংগৃহীত কোন সাক্ষ্য ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবহার করা যাবেনা।
বাংলাদেশে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণের ক্রমবিবর্তন
বাংলাদেশে শুরুর দিকে মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের উল্লেখ ছিল। তখন ডিজিটাল ডকুমেন্ট বা ইলেকট্রনিক রেকর্ডের স্বীকৃতি ছিলনা। আইসিটি আইন ৫ ও ৮৪ তে ইলেকট্রনিক রেকর্ড, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও ডিজিটাল প্রমাণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপরে রাষ্ট্র বনাম মো: খালেদ (২০০৮) মামলায় ভিডিও ফুটেজকে অনুমোদন দেয়। রাষ্ট্র বনাম ইমরান হোসেন (২০১৩) ডিএনএ ও ডিজিটাল তথ্য গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২, ৮, ৪৩ ধারায় ডিজিটাল তথ্যের নিরাপত্তা ও প্রমাণ সংগ্রহে আইনি কাঠামো প্রবর্তিত হয়।নুসরাত হত্যা মামলা ২০১৯, রিফাত শরীফ হত্যা মামলা(২০১৯), পরীমণি মামলায় ডিজিটাল এভিডেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারতে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণের ইতিহাস
ভারতের সুপ্রিমকোর্টের Anvar P.V vs P.K Basheer& others(2014) 10 SCC 473 মামলাটি ডিজিটাল প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা বিষযে মাইলফলক রায় হিসেবে বিবেচিত। Anvar P.V কেরালার ইনারড বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন। তিনি অভিযোগ করেন বিজয়ী প্রার্থী P.K Basheer নির্বাচনী প্রচারণায় মিথ্যা ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন যা Representation of the People Act, 1951 123(ii) 123(iv) অনুযায়ী দুর্নীতিপূর্ণ আচরণ। তিনি অভিযোগের সিডি ও ভিসিডি আকারে ইলেকট্রনিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন। আদালত পর্যবেক্ষণে জানান যে, ইলেকট্রনিক প্রমাণ আদালতে গ্রহণযোগ্য করতে হলে 65B(4) অনুযায়ী সার্টিফিকেট সংযুক্ত থাকতে হবে যা রেকর্ডের প্রাসঙ্গিকতা ও সঠিকতা আদালতে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাই নির্বাাচনী ফাফল বাতিল করার কোন ভিত্তি নেই।
পরবর্তীতে Arjun Panditrao Khotkar vs Kailash Kushanrao Gorantyal মামলায় আদালত অবার পুনব্যক্ত করেন যে, 65B(4) অনুযায়ী সার্টিফিকেট দাখিল বাধ্যতামূলক এবং মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা এটি প্রতিস্থাপন করা যাবেনা। এই মামলায় আর্জুন পন্ডিাত্রাও খোতকর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে অভিযোগ করেন যে, বিজয়ী প্রার্থী কৈলাশ কুশানরা ও মনোয়নপত্র জমা প্রদান করেছেন নির্ধারিত সময়সীমা লঙ্ঘন করে। যা ভিডিও রেকর্ডিং এর মাধ্যমে। আদালত বলেন যে সার্টিফিকেট ব্যতিত ভিওি রেকর্ডিং গ্রহণযোগ্য নয়।
ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য কি
সংক্ষেপে বলা যায়, ডিজিটাল রেকর্ড ও ইলেকট্রনিক রেকর্ড একই অর্থ বহন করে, ডিজিটাল একটু ক্ষুদ্রতম। যে সকল ডাটা বাইনারি ফর্মে সেটিই ডিজিটাল। বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বা ডিভাইসে রক্ষিত বা উৎপাদিত সকল ডাটা বা রেকর্ড ই ইলেকট্রনিক রেকর্ড। তবে সাক্ষ্য আইনের বিধানে এই দুটি শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত ভারতে ইলেকট্রনিক এভিডেন্স এবং বাংলাদেশে ডিজিটাল সাক্ষ্য শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আগেই বলেছি ইলেকট্রনিক রেকর্ড একধরনের ডকুমেন্ট। যে ডিভাইসে উৎপাদন, সৃজন বা সংরক্ষণ করা হবে সেই ডিভাইস সহ দাখিল হলে তা প্রাথমিক ডকুমেন্টস। কিন্তু, সামান্যতম হস্তক্ষেপে যদি অন্য স্টোরেজ বা মাধ্যমে স্থানান্তর বা কপি করা করা হয়, সেটিই মাধ্যমিক ডকুমেন্টস। ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও এই মতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য।
ডিজিটাল সাক্ষ্য হচ্ছে ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যের একটি উপশ্রেণী। ডিজিটাল এভিডেন্স প্রাইমারি এভিডেন্স হবে যদি -তা মূল ডিভাইস বা মূল সোর্স থেকে উপস্থাপন করা হয়, তা পরিবর্তন বা হেরফের করা হয়নি, ফরেনসিকভাবে যাচাইযোগ্য এবং আদালত যদি তা সঠিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে । ধরুন একটি হোয়াটসএপ চ্যাট যদি মোবাইল থেকে সরাসরি আদালতে উপস্থাপন করা হয় এবং তা যদি যাচাই যোগ্য হয় তবে তা প্রাইমারি এভিডেন্স। কিন্তু তার প্রিন্ট কপি বা স্ক্রিনশট কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি না সত্যতার সনদসহ দাখিল করা না হয় ।
সাক্ষ্য আইনের যে সমস্ত ধারায় ডিজিটাল সাক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে
ধারা-৩- ডকুমেন্ট এর সঙ্গার মধ্যে ডিজিটাল রেকর্ড আলোচিত হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ড ও ইলেকট্রনিক রেকর্ড, ডিজিটাল সিগনেচার, ইলেকট্রনিক সিগনেচার এখানে আলোচিত হয়েছে।
ধারা-১৭- ডিজিটাল রেকর্ড যদি ঘটনা সম্পর্কে কোন সাজেশন দেয় তবে সেটি এডমিশন হিসেবে গণ্য হয় ।
ধারা ২২ক- ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কে মৌখিক স্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য নয় যদিনা সেটি তার সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না যায় ।
ধারা-৩৪-ব্যবসায়িক লেনদেনের অংশ হিসেবে কোন ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হলে তা প্রাসঙ্গিক হবে ।
ধারা-৩৫- দাপত্মরিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কোন ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হলে তা প্রাসঙ্গিক হবে ।
ধারা-৩৬- সরকারের কর্তৃত্বের অধীনে কোন ডিজিটাল রেকর্ড প্রস্তুত করা হলে তা প্রাসঙ্গিক হবে ।
ধারা-৩৭-জনসাধারণের বিষয় সম্পর্কিত দায়িত্বকালিন বক্তব্য প্রাসঙ্গিক
ধারা-৩৮-সরকারি রেকর্ডে মতামত প্রাসঙ্গিক
ধারা-৩৯- বক্বব্যের পুরোপুরি অংশ বিবেচনায় নিতে হবে ।
ধারা-৪৫-ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্ক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত প্রাসঙ্গিক ।
ধারা-৪৭ক-ডিজিটাল সিগনচোর সম্পর্কে সার্টিফিকেট অথোরিটির মতামত প্রাসঙ্গিক ।
ধারা-৬৫ক ও ৬৫বি- ডিজিটাল রেকর্ডের বিষয়বস্তু ৬৫ বি ধারার বর্ণিত নিয়মানুযায়ী প্রমাণ করতে হবে ।
ধারা-৮১ক- অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত ডিজিটাল রেকর্ডকে আদালত জেনুইন বলে ধরে নিবে ।
ধারা-৮৮খ- originator কর্তৃক addressee ববরাবর যে মেসেজ পাঠানো হয় আদালত সেটি সঠিক বলে ধরে নিতে পারে ।
ধারা-৯০ক- ডিজিটাল রেকর্ড পাঁচ বছরের পুরাতন হলে আদালত সঠিকভাবে বলে ধরে নিবে ।
ফরেনসিক কি?
ডিজিটাল সাক্ষ্য জানতে হলে প্রাসঙ্গিক ভাবে একটি বিষয় সামনে আসে সেটি হচ্ছে ফরেনসিক। ফরেনসিক দুই প্রকার যথা: ১. ডিজিটাল ফরেনসিক ২. মেডিকেল ফরেনসিক। আমাদের আজকের আলোনার বিষয় ডিজিটাল ফরেনসিক। ডিজিটাল রেকর্ড ও সাক্ষ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ, পরীক্ষা ও মানব বোধ গম্য করে উপস্থাপনার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই ডিজিটাল ফরেনসিক। যেমন: ডিলিট হওয়া একটা ডেটা বৈজ্ঞনিক টুলস ব্যবহার করে উদ্ধার। একটি ছবি এডিট করা কিনা তা বিশ্লেষণ করে বের করা ইত্যাদি। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ডিজিটাল যন্ত্র বা মিডিয়া থেকে তথ্য উদ্ধার বিশ্লেষণ এবং যাচাই করা হয়, যাতে আদালতে তা শ্বিস্ত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফরেনসিক গাইডলাইন ২০২৩ অনুসরন করে ডিজিটাল সাক্ষ্য বিষয়ে তদন্ত করা হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে একটি বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য Expert opinion হিসাবে গৃহীত হয়। সত্যতা যাচাই, উৎস নির্ধারণ, সময় ও স্থান নির্ধারণ, সম্পাদনা ও টেম্পারিং চিহ্নিত করতে ফরেনসিক বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের দেশে কয়েকটি ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন বিসিসি, CID-Crime Investigation Department, Private Digital Forensic Firms.
ডিজিটাল সাক্ষ্য প্রমাণের নিয়ম
ডিজিটাল সাক্ষ্য এক ধরনের মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ডিজিটাল সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু সাক্ষ্য আইনের ৬৫বি অনুযায়ী প্রমাণ করতে হবে। ইলেকট্রনিক রেকর্ড আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে যদি:
ক. রেকর্ডটি কোনো কম্পিউটার দ্বারা তৈরি হয়েছিল।
খ. রেকর্ডের সময় কম্পিউটারটি সঠিকভাবে কাজ করছিল।
গ. রেকর্ডটি যিনি করেছেন তিনি সার্টিফিকেট দিয়েছেন রেকর্ডটি সঠিক ছিল।
দ্রুত বাড়ছে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
বাংলাদেশে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার বর্তমানে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি আইন প্রনয়ণ ও সংশোধনের পর ও সাইবার অপরাধ ও ডিজিটাল ডকুমেন্টস সংশ্লিষ্ট মামলা গুলিতে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার বেশ লক্ষ্যণীয়।
ক. আইনি কাঠামো
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬: এই আাইনে ডিজিটাল ডকুমেন্ট, ইলেকট্রনিক রেকর্ড এবং ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য বৈধতা পায়। ধারা-৮(তথ্য সংরক্ষণ ও সহায়তা), ধারা ২৫-৩৬-বিভিন্ন ডিজিটাল অপরাধ এবং সেইগুলোর বিচার প্রক্রিয়া।
- সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ সংশোধনী: ইলেকট্রনিক রেকর্ডকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার বিধান যুক্ত হয়েছে।
- সাইবার ট্রাইবুনাল ও সাইবার আপিল ট্রাইবুনাল : এসব আদালতে মূলত ডিজিটাল সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে বিচার হয় ।
- পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ২ঘ ধারায়, মানবপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৩০ ধারায় ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবহারের কথা বিধৃত হয়েছে । স্পেশাল ট্রাইবুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল, আইসিটি আইনে ভিডিও ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে ।
খ. ডিজিটাল সাক্ষ্যের ধরন
- ইমেইল
- এসএমএস/টেক্সট মেসেজ
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট বা মেসেজ(ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি)
- ভিডিও/অডিও রেকর্ডিং
- ডিজিটাল স্বাক্ষরিত দলিলপত্র
গ. ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপনের শর্ত
- সঠিকভাবে প্রমাণ করতে হয় যে, ডকুমেন্ট বা রেকর্ডটি প্রামাণিক এবং অক্ষত।
- ফরেনসিক বিশ্লেষন অনেক সময় প্রয়োজন হয় । যেমন: বিসিসি, সিআইডি।
- সনদপ্রদানকারী বা প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে।
ঘ. ব্যবহারিক কিছু মামলা
- সাইবার অপরাধ মামলা: যেমন: ব্লাকমেইল, ডেটা চুরি, অনলাইনে মানহানিকর বক্তব্য ইত্যাদি মামলায়
- মানহানি ও চাঁদাবাজি মামলা: যেখানে ডিজিটাল চ্যাট বা ভিডিও রেকডর্১ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
- নগদ ও বিকাশ জালিয়াতি মামলা : ট্রানজেকশনের ডিজিটাল ট্রেইল/লগ ব্যাবহৃত হয়
- ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রতারণা: অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে জালিয়াতির ক্ষেত্রে
ঙ. চ্যালেঞ্জসমূহ
- ডিজিটালতথ্যের অখন্ডতা নিশ্চিত করা কঠিন।
- প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব।
- ফ্রড বা ম্যানিপুলেটেড ডেটা চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে।
- আদালতে বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য গ্রহণ ও ব্যাখ্যা জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
ক. সাইবার ক্রাইম মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬(সংশোধিত ২০১৩) এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮
সাক্ষ্যের ধরন:
- ফেসবুক পোস্ট/মেসেজের স্ক্রিনশট
- ইমেইল
- সার্ভার লগ (কবে, কোথা থেকে অ্যাক্সেস হয়েছে)
- ফোনে রেকর্ডকৃত ভয়েস মেসেজ বা ভিডিও
খ. ব্যবহারিক উদাহরণ
কাউকে ফেক আইডি দিয়ে হুমকি দেওয়া হলে, আইডির স্ক্রিনশট, লগ রিপোর্ট এবং আইপি ট্রেস রিপোর্ট প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়। পারিবারিক মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার: সরাসরি আইনের বিধান নেই, তবে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ প্রযোজ্য ।
সাক্ষ্যের ধরন
- বিবাহ বা তালাক সংক্রান্ত মেসেজ/ইমেইল
- পারিবারিক নির্যাতনের ভিডিও/অডিও
- হোয়াটসএপ, ভাইবার মেসেজ সংরক্ষণ ।
গ. ব্যবহারিক উদাহরণ: দাম্পত্য নির্যাতন প্রমাণ করতে, স্বামীর পাঠানো হুমকির মেসেজ/রেকর্ডিং আদালতে উপস্থাপন করা হয় ।
ঘ. ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিনান্স প্রতারণা মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার: আইনি ভিত্তি: ব্যাংক কোম্পানি আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
ঙ. সাক্ষ্যের ধরন
- বিকাশ/নগদ ট্রানজেকশন হিস্ট্রি
- ব্যাংকিং সার্ভার লগ
- প্রতারণামূলক ফোন কলের রেকর্ড
চ. ব্যবহারিক উদাহরণ
আপনি লটারি জিতেছেন। এই ধরনের মেসেজ পাঠিয়ে টাকা আত্সাৎ করা হলে, বিকাশ/নগদের রেকর্ড দিয়ে অপরাধ প্রমাণ করা হয় ।
ছ. ফৌজদারি মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
আইনি ভিত্তি: ফৌজদারি দন্ডবিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
- হুমকি বা ব্লাকমেইলের ভয়েস রেকর্ড
- গোপনে রেকর্ডকৃত ভিডিও/অডিও ক্লিপ
- ব্লাকমেইল করতে পাঠানো ইমেইল
ব্যবহারিক উদাহরণ: কাউকে ফাঁসাতে ব্লাকমেইলের চিঠি পাঠালে বা অডিও রেকর্ড পাঠালে, সেই রেকর্ড আদালতে উপস্থাপন করে দোষী প্রমাণ করতে হয় ।
জ. মানহানির মামলায় (ডিজিটাল মিডিয়ায়) ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
- ফেসবুক পোস্ট
- ইউটিউব ভিডিও
- অনলাইন নিউজ লিংক বা স্ক্রিনশট
ব্যবহারিক উদাহরণ
কারও বিরুদ্ধে অনলাইন বা ফেসবুকে মিথ্যা অভিযোগ বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হলে, সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ও ইউআরএল সংগ্রহ করে আদালতে দাখিল করা হয়।
দেওয়ানি মামলা
চুক্তির মামলা: ইমেইলের মাধ্যমে চুক্তি বা কথাবার্তার প্রমাণ আদালতে ইলেকট্রনিক রেকর্ড হিসেবে জমা দয়া হয়। অনলাইন লেনদেনের রশিদ উপস্থাপিত হয় ।
পাওনা আদায় মামলা: অনলাইন পেমেন্ট, বিকাশ, নগদ, ব্যাংক, ট্রান্সফার এর রেকর্ড আদালতে ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঝ. দুর্নীতির মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ই-মেইল, কল-রেকর্ড, সিটিটিভি ফুটেজ, অনলাইন ট্রান্সফার ইত্যাদি,দুর্নীতির মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । সরাসরি বিধৃত না থাকলে ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ধারা ২০, ২৫ এবং ধারা ২৭ অনুযায়ী ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবহার করা যাবে । নথি বা দলিলপত্র শব্দের ডিজিটাল রেকর্ড অন্তভর্’ক্ত বলে ধরে নেওয়া হয় ।মালেক স্যার দুর্নীতি মামলায় মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করতে হয় এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য প্রমাণিত হয় । পিপলস লিজিং এর মামলায় ফরেনসিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন, মেইল কমউিনিকেশন, সার্টিফিকেটসহ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। হালিমা গ্রুপ, ডেসটিনি ২০০০, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ঋণ জালিয়াতির মামলা, বনানির রেইনট্রি ইত্যাদি মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্য বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ।
ঞ. নারী ও শিশু মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
উক্ত আইনের ধারা ২৩ এবং ৩২ক তে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার বিধৃত হয়েছে। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৫৬ ধারায়, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮ এর আইনরে ১২১ ধারায় ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ধারা ২(১) ঙ,ঞ,ট ও ১৭, ১৮, ১৯, ২২, ২৩ তে ডিজিটাল সাক্ষ্যে ও দন্ডের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আইন ২০০২, আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২, মূল্য সংযোজন কর আইনে ও ডিজিটাল এভিডেন্স গ্রহণকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। নারী ও শিশু মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবহার বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে। ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা ও অজ্ঞাত শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারনে ডিএন এ পরীক্ষা করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনে মেডিকলে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবেন। রাষ্ট্র বনাম মো: ইমরান হোসেন মামলা (নরসিংদী রেপ কেস) ভিকটিমের শরীরে ডিএনএ নমুনা অভিযুক্তের সাথে মিলে যায় এবং আদালত তাকে দন্ড প্রদান করে। আবার অন্যদিকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মিল না পাওয়ায় আসামীকে খালাস দেওয়া হয়। আদালত উক্ত মামলায় মন্তব্য করে যে ডিএন এ হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফরেনসিক প্রমাণ ।
বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
ক. তনু হত্যা মামলা
- মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, ইন্টারনেট ব্যবহার বিশ্লেষণ।
- ব্যবহার: শেষ সময়ে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করা ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা।
- চ্যালেঞ্জ: মূল অপরাধের দৃশ্যমান কোনো ডিজিটাল প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
খ. মেজর সিনহা হত্যা মামলা
- ঘটনার সময়ে সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের ভিডিও রেকর্ডিং, ওয়াকিটকি কল রেকর্ড
- ব্যবহার: গুলি ছোঁড়ার সময় ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ
- ফলাফল: প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গ. আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা
- ডিজিটাল সাক্ষ্য; মেসেঞ্জার মেসেজ, বুয়েট মৈরে বাংলা হলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কল রেকর্ড
- ব্যবহার: ঘটনার আগে ও পরে অভিযুক্তদের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বোঝা যায় ।
- ফরেনসিক যাচাই: ভিডিও ক্লিপগুলোর সাথে কোররকম কাটাছেঁড়া বা এডিটিং নেই তা ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব দ্বারা যাচাই করা হয়েছে ।
- কোর্ট ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করে তা প্রমাণ হিসেবে পেয়েছে ।
- ফলাফল: ডিজিটাল প্রমাণের উপর ভিত্তি করে অভিযুক্তদের সাজা প্রদান ।
- হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়েছে । ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখা হয়েছে । ০৩.০৫.২০২৫ খ্রিস্টাব্দে ১৩১ পৃষ্ঠা সম¦লিত মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় প্রকাশিত হয়েছে ।
ঘ. ফারদিন নূর পরশ মামলা (২০২২)
- ২৫০ টির বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোবাইল ট্রাকিং, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিটি
- ফলাফল: হত্যা নয়, আত্নহত্যা বলে উপসংহার।
ঙ. বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলা ও ডিজিটাল এভিডেন্সের ভূমিকা
ঘটনার সারাংশ: ২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর, ঢাকায় বিএনপি ও জামসায়াতের হরতালের দিন ভিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যভাবে হত্যা করা হয় । কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না, সাধারণ একজন টেইলার্স কর্মচারী ছিলেন। তাকে প্রকাশ্যে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।
ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার
১. টেলিভিশন ও মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ
- ঘটনার সময় একাধিক টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করছিল।
- ক্যামেরায় ধরা পড়ে হামলার প্রত্যেকটি মুহূর্ত
- অভিযুক্তদের মুখ, পোশাক ও অস্ত্র ষ্পষ্টভাবে দেখা যায়।
২.সিসিটিভি ফুটেজ : আশপাশের দোকানপাট ওভবনের ক্যামেরার ফুটেজ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।
৩. ফটোগ্রাফ ও স্থিরচিত্র:
- বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘটনার স্থিরচিত্র প্রকাশ করে।
- ছবি দেখে আসামীদের শনাক্ত করা হয়।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া: ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ডিজিটাল সাক্ষ্যের গুরুত্ব
- ভিডিও ও ছবি থেকে আসামীদের শনাক্ত করে আদালতে প্রমাণ করা হয়।
- ডিজিটাল ফুটেজে সরাসরি ও অকাট্য সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে গৃহীত হয়।
- বিচারে ভিডিও ফুটেজ ই ছিল মূল ভিত্তি ।অনেক সাক্ষীই এর সত্যতা নিশ্চিত করে।
লিগ্যাল ইস্যুসমূহ
ক. সিসিটিভি ফুটেজ ও মিডিয়া রিপোর্টের সাক্ষ্যগত মূল্য।
খ. দ্রুত বিচার আইনে কি ভিডিও ফুটেজ এর সাক্ষ্যগত মূল্য রয়েছে।
গ. অভিযুক্তদের কি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সনাক্তকরন কি বৈধ?
কোর্টের পর্যবেক্ষণ
ভিডিও ফুটেজগুলো দাপ্তরিকভাবে টিভি চ্যানেলগুলো থেকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং তদন্তকারী অফিসারের কাছে জব্দ তালিকা হিসেবে এটি সরববরাহ করা হয়েছিল। তাই এই ভিডিও ফুটেজের নির্ভুলতা যাচাই গুরুত্বপূর্ণ। টিভি চ্যানেলগুলো যখন এটি দাপ্তরিকভাবে সরবরাহ করে তখন এটি স্বাভাবিকভাবে সঠিক এবং এইক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের দরকার নেই। দ্রুত বিচার আইন এর ধারা ১৬ অনুযায়ী ভিডিও ফুটেজ এবং ফটোগ্রাফস সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য ।
মামলার ফলাফল
২০১৩ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২১ জন আসামীর মধ্যে ৮জনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে ।
রায়ের সময় আদালত উল্লেখ করে-ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্রের মাধ্যমেই আসামীদের পরিচয় ও অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে ।
চ. এসপি বাবুল আক্তার কেস
ঘটনার সারাংশ: ২০১৬ সালের ৫ ই জুন সকালে চট্টগ্রাম শহরে স্কুলে সন্তানকে পৌঁছে দিতে যাওয়ার মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রথমে বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে মামলা করে ও পরে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ ওঠে।
ডিজিটাল এভিডেন্সের ব্যবহার
- বাবুল আক্তারের মোবাইল কল লিস্ট বিশ্লেষন করা হয়।
- আসামীদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা দাবী করে।
মোবাইল লোকেশন ট্রাকিং: ঘটনার সময় কারা কোথায় ছিল,সেটি মোবাইল টাওয়ার ডেটা থেকে বিশ্লেষন করা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ: হত্যাকারীদের আসা-যাওয়ার দৃশ্য মোবাইলে ধরা পড়ে।
ডিজিটাল মেসেজ ও সোশ্যাল মিডিয়া তথ্য: বাবুল আক্তার ও সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের মধ্যে ডিজিটাল যোগাযোগ বিশ্লেষণ করা হয় ।
মামলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়
- শুরুতে মামলায় বাবুল আক্তার বাদী ছিলেন।
- পিবিআই বাবুল আক্তারকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করে।
- পিবিআই তার বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে চার্জশীট দেয়।
ডিজিটাল সাক্ষ্যের ভূমিকা
- কল রেকর্ড ও লোকেশন ডাটা বাবুল আক্তার ও ভাড়াটে খুনীদের সংযোগ স্থাপন করে।
- সিসিটিভি ফুটেজ হত্যার সময়ে গতিবিধি ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়।
ছ. রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্য বিশ্লেষণ
ক ভিডিও ফুটেজের আদালতে ব্যবহার
- হত্যার ঘটনা ভিডিও ও সিসিটিভি ও পথচারীদের মোবাইল ক্যামেরা থেকে পাওয়া যায়।
- ভিডিওতে রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার দৃশ্য ষ্পষ্ট হয়।
- মিন্নি ঘটনাস্থল থেকে রিফাতকে পুরোপুরি বাাঁচানোর চেষ্টা করেনি।
- ভিডিও সাক্ষ্য আদালতে মূল সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত করা হয় যে, ভিডিও গুলো এডিট বা বিকৃত করা হয়নি।
খ. মোবাইল কল লিস্ট ও মেসেজ বিশ্লেষণ
- পুলিশ আসামীদের কল রেকর্ড ও তথ্য বিশ্লেষণ করে।
- হত্যাকান্ডের পূর্বে মিন্নির নয়নবন্ডের সাথে যোগাযোগ ছিল এবং তাদের পূর্বেকার কথোপকথোন তাদের পরিকল্পনার বিষয়টি ষ্পষ্ট করে । তথ্য গুলো ডিজিটাল সিগনাল হিসেবে আদালতে উপস্থাপিত হয়।
গ. সোশ্যাল মিডিয়া আলামত
১. মিন্নি ও নয়নবন্ডের ঘনিষ্ট সম্পর্কের ছবি ও তাদের পূর্বেকার দাবি, চ্যাটিং ও পোস্ট।
২. তাদের পূর্বেকার সম্পর্ক ।
ঘ. আদালতে মিন্নির আইনজীবীর যুক্তি
- ভিডিও ফুটেজ খন্ডিত ও সম্পূর্ণ নয়।
- ভিডিও সম্পূর্ণ প্রকাশিত না হওয়ায় মিন্নির ভুমিকা অস্পষ্ট।
- কললিস্টের রেকর্ড দেখানো হয়েছে, বক্তব্যের রেকর্ড বা মেসেজের পূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপিত হয়নি।
মোবাইল ফরেনসিক যেভাবে হল
- মোবাইল জব্দ করে ও সিআইডি ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে।
- মোবাইল থেকে কল লিস্ট, মেসেজ ও লোকেশস উদ্ধার করে। হোয়াটসএপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ব্যাকআপ বিশ্লেষণ করে।
- ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সংক্ষেপে ভিডিও ফুটেজ, কললিস্ট বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি, ফরেনসিক রিপোর্ট মামলার রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা রেখেছে। উক্ত মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।
শেষ কথা
ডিজিটাল সাক্ষ্যআদালতে প্রমাণ করতে হলে সত্যতা প্রমাণ করতে হবে, উৎস নির্ভরযোগ্য হতে হবে, চেইন অব কাস্টডি বজায় থাকতে হবে, প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্লেষণযোগ্য হতে হবে, ফরমাল সার্টিফিকেট থাকতে হবে । আমাদের দেশে যে সমস্ত মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে এই শর্ত গুলো প্রতিপালন করতে দেখা যায় । আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ডিজিটাল সাক্ষ্যের বদলে ইলেকট্রনিক এভিডেন্স কথাটি বেশি যুক্তিযুক্ত কেননা এটি বৃহৎ পরিসরকে ধারন করে । আমাদের দেশে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণ করতে গেলে অনেক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ।প্রযুক্তির সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি, প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত জনবল ও বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধিই পারে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগি করতে ।
Reference:
- State vs Rafiqul Islam, 70 DLR(2018) 27
- Anvar P.V vs P.K Basheer& others(2014) 10 SCC 473
- Arjun Panditrao Khotkar vs Kailash Kushanrao Gorantyal(2020) 7 SCC1
লেখক: আনিচুর রহমান; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ই-মেইল: anichur19001@gmail.com