প্রতিবন্ধিতার ভিত্তিতে বৈষম্য-সহিংসতার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আবেদনের প্রথম শুনানী কিশোরগঞ্জে

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি জেলায় “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত জেলা কমিটি থাকলে ও অদ্যাবধী চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জে মাত্র তিনটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের অভিযোগটি তৃতীয় হলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এধরণের অভিযোগের শুনানী অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের জেলা কমিটিতে।

গত বৃহস্পতিবার (১আগস্ট) বেলা ১২টায় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসকক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ৩৬ ধারায় ক্ষতিপূরণের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানীতে অভিযোগকারী/ভিকটিম পক্ষ হলেন, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের শামুকজানি গ্রামের মোঃ কেন্ত মিয়ার পুত্র প্রতিবন্ধী মোঃ মোশারফ মিয়া। আর অভিযুক্ত পক্ষ হলেন, তাড়াইল উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের দড়ি জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের এম আর খাঁন সাহান ও সাজ্জাদ হোসেন হিটলার, এবং একই উপজেলা ও ইউনিয়নের পংপাচিহা গ্রামের আলম।

দুপুর ১২টায় শুনানীর শুরুতে, অভিযোগকারী পক্ষ উপস্থিত থাকলেও বিবাদীপক্ষ ছিল অনুপস্থিত।

জানা যায়, অভিযুক্তপক্ষের এম আর খাঁন সাহান অসুস্থতার কারন দেখিয়ে সময়ের আবেদন করেছেন। এম আর খাঁনের পক্ষে সময়ের আবেদনটি জমা দেন তাঁর বড় ভাই আব্দুল আউয়াল খাঁনের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম খান রুমান। বিবাদী সাজ্জাদ হোসেন হিটলার বাদীর করা অপর মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। অপর বিবাদী আলম পলাতক রয়েছেন।

অভিযোগকারী তাঁর ক্ষতিপূরণের আবেদনে, চিকিৎসা, মানসিক ক্ষতি, যাতায়াতসহ আরো কয়েকটি কারন উল্লেখ করে মোট ৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার শুনানী শেষে আগামী ৮ আগস্ট পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য-সচিব ও জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান খান।

জেলা প্রশাসকের আমন্ত্রণে আইনী ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য শুনানীতে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রজিকিউটর শাহ আজিজুল হক। বাদীপক্ষকে শুনানী উপস্থাপনে সহযোগিতা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ রেজাউল করিম সিদ্দিকী।

কিশোরগঞ্জের জেলা কমিটি দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আইনজীবী রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, “আদালতের দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিকার প্রদানের লক্ষ্যে আইনের ৩৬ ধারায় কার্য ধারা পরিচালনায় কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি বাংলাদেশে একটি মাইলফলক স্থাপন করেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য জেলা কমিটিসমূহের সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ও ব্লু ল ইন্টারন্যাশনাল এর তত্বাবধোনে পরিচালিত “ইউএসইডএর এক্সপান্ডিং পার্টিসিপেশন অব পিপল উইথ ডিজএবিলিটি প্রোগ্রাম” এর পক্ষে অভিযোগকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মোশারফ মিয়াকে বিনামূল্যে আইনী ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং সোসাইটি ফর এডুকেশন এন্ড ইন্ক্লুশন অব দ্য ডিজএ্যবল্ড (সীড)।

অভিযোগকারীর পক্ষে শুনানীতে আরও সহযোগিতা প্রদান করেন মোঃ ফরিদুল আলম (জেলা সমন্বয়কারী পপি), বশির আল হোসাইন (প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা), মোঃ জালাল উদ্দিন (সেল্ফ এডভোকেট সীড)।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন তাড়াইল উপজেলার পূর্ব দড়ি জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস অফিসার এম, আর খাঁন সাহানের নির্দেশে তাঁর বাড়ীর কেয়ারটেকার হিটলার ও আরো কয়েকজন কথিত চুরির অপরাধে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি মোশারফকে (১৮) হাত-পা বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে তাড়াইল থানায় একটি ফৌজদারি মামলা হয় যার নম্বর ৪ (৬) ১৯। উক্ত মামলার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক জেলা কমিটিতে এই ক্ষতিপূরণের আবেদনটিও দায়ের করা হয়েছে।