কথিত চুরির অভিযোগে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর মোঃ মোশারফ মিয়াকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন

প্রতিবন্ধী কিশোর নির্যাতন: ত্রিশ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে কথিত চুরির অভিযোগে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর মোঃ মোশারফ মিয়াকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা অনুসন্ধানে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ত্রিশ দিনের মধ্যে উক্ত কমিটিকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এ নির্দেশ দেন।

মানসিক অসুস্থতা জনিত প্রতিবন্ধী কিশোর মোঃ মোশারফ মিয়া কর্তৃক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ৩৬ ধারায় দায়েরকৃত অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষে মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা প্রকাশক সভাকক্ষে বুধবার (২১ আগস্ট) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

উভয়পক্ষের বক্তব্য শ্রবণান্তে মাননীয় জেলা প্রশাসক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ ও এর অধীনে প্রনীত বিধিমালার সংশ্লিস্ট ধারা ও বিধি মোতাবেক তারাইল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৪(চার) সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদন লাভের পর অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হবে মর্মে জেলা প্রশাসক সকলকে অবহিত করেন।

শুনানী পরিচালনায় তাকে সহায়তা করেন জেলা কমিটির সদস্য-সচিব জনাব কামরুজ্জামান খান, উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ।

শুনানীতে অভিযোগকারী মোঃ মোশারফ মিয়া, ১ ও ২ নং অভিযুক্ত ব্যক্তি জনাব এম আর খান শাহান ও সদ্য জামিনে মুক্ত সাজ্জাত হোসেন হিটলার উপস্থিত থেকে নিজ নিজ পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অপর অভিযুক্ত মোঃ আলম পলাতক থাকায় শুনানীতে অনুপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে এম আর খান শাহান দায়েরকৃত অভিযোগটি অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ মর্মে উল্লেখ করেন এবং একই ঘটনায় দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় একটি ফৌজদারি মামলা চলমান বিধায় অভিযোগটি খারিজ কিংবা ফৌজদারি মামলা নিস্পত্তির পূর্ব পর্যন্ত ৩৬ ধারার কার্যক্রম মূলতবী রাখার প্রার্থনা করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন বর্ণিত কারনে অভিযোগটি আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার জেলা কমিটির নেই বিধায় সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে তিনি “নোটিশ ডিমান্ডিং জাস্টিস” প্রেরণ করেছেন।

অভিযোগকারীর পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ও ব্লু ল ইন্টারন্যাশনালের ইন-কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মোঃ রেজাউল করিম সিদ্দিকী শুনানীতে অংশগ্রহণ করে বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ একটি বিশেষ আইন যা প্রতিবন্ধি তার বিরুদ্ধে বৈষম্য নির্মূল ও অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে জেলা কমিটিকে ৩৬ ধারার অধীনে প্রতিকার প্রদানের ক্ষমতা দিয়েছে। ফৌজদারি আইনে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে সেটি অপরাধের বিচারের জন্য, অন্যদিকে জেলা কমিটিতে ক্ষতিপূরণের জন্য যে অভিযোগটি দাখিল করা হয়েছে তা প্রতিবন্ধিতার ভিত্তিতে বৈষম্য ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার প্রদানের জন্য। ফলে ফৌজদারি মামলাটি চলমান থাকার কারণে ৩৬ ধারায় প্রতিকার প্রদানের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হতে পারেনা।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনী অধিকার লাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি কমিটিকে অবহিত করেন, আবেদনপত্রে ত্রুটি বা পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির ন্যায়বিচার লাভের অধিকার বিনষ্ট হতে পারেনা বিধায় অভিযোগটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে তার প্রার্থীত ৬,৭০,০০০ (ছয় লক্ষ সত্তর হাজার) টাকা প্রদানের আদেশ প্রদান করা সমীচীন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ জুন তাড়াইল উপজেলার পূর্বদড়ি জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস অফিসার এম আর খাঁন শাহানের নির্দেশে তাঁর বাড়ীর কেয়ারটেকার হিটলার ও আরো কয়েকজন কথিত চুরির অপরাধে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর মোশারফ (১৮) কে হাত-পা বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে তাড়াইল থানায় একটি ফৌজদারি মামলা মামলা হয় যার নম্বর ৪(৬)১৯। উক্ত মামলার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক জেলা কমিটিতে এই ক্ষতিপূরণের আবেদনটিও দায়ের করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ও ব্লু ল ইন্টারন্যাশনাল এর তত্বাবধোনে পরিচালিত “ইউএসইড এর এক্সপান্ডিং পার্টিসিপেশন অব পিপল উইথ ডিজএবিলিটি প্রোগ্রাম” এর পক্ষে অভিযোগকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মোশারফ মিয়াকে বিনামূল্যে আইনী ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং সোসাইটি ফর এডুকেশন এন্ড ইন্ক্লুশন অব দ্য ডিজএ্যবল্ড (সীড)। অভিযোগকারীর পক্ষে শুনানীতে সহযোগিতা প্রদান করেন ব্লাস্ট এর ময়মনসিংহ ইউনিট সমন্বয়কারী এডভোকেট আবুল কাশেম মুছা, মোঃফরিদুলআলম (জেলা সমন্বয়কারী পপি) এবং বশির আল হোসাইন (প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা)। – সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

আরও পড়ুন : প্রতিবন্ধিতার ভিত্তিতে বৈষম্য-সহিংসতার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আবেদনের প্রথম শুনানী কিশোরগঞ্জে