বাগদত্তার অপহরণ ফাঁদে আইনজীবী, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, যশোর

বাগদত্তার অপহরণ ফাঁদে আইনজীবী, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল ওরফে মিলন অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় মামলায় হাবিব মিলন রাজকে আটক করেছে যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আটকের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ঘটনার সাথে জড়িত ও অপর জড়িত আসামিদের নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসুর আদালতে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সোপর্দ করা হলে আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামির জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

আসামি হাবিব মিলন রাজ খুলনার দিঘলিয়ার দেয়ড়া দেবনগর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে খুলনার দৌলতপুর এলাকা থেকে রাজকে গ্রেফতার করা হয়। আটকের পর রাজ ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট মিলন সাতক্ষীরার তালার বরুইহাটি গ্রামের সাংবাদিক এমএ হাকিমের ছেলে। মিলনের সাথে রাবেয়া সুলতানা রিতুর বিয়ে ঠিক হয় পারিবারিকভাবে। বিয়ের আগে ঋতুর কথামতো মিলন গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি দেখা করার জন্য খুলনা পাইওনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে যায়। এরপর তারা মিলনকে অভয়নগরের একতারপুর গ্রামের ভাড়াবাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর মিলনকে সেখানে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।

এ ঘটনায় একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অপহৃত মিলনের দুলাভাই শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে অভয়গর থানায় মামলা করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩৬৫/৩৮৫/৩৮৭/৩৪ অভিযোগ আনা হয়।

এরপর মামলাটি পিবিআই যশোর জেলায় স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই স্নেহাশিস দাসের উপর অর্পণ করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রকাশ্য ও গোপন তদন্ত এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ শাহীন শিকদার, আব্দুস সালাম, সুরাইয়া এবং রাবেয়া সুলতানা রিতু।

গ্রেফতার করে বিভিন্ন তারিখে আদালতে সোপর্দ করা হলে সকলেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তবে আবু হেনা মোস্তফা কামাল অপহরণের প্রধান অভিযুক্ত হাবিব মিলন এতদিন পলাতক ছিল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্নেহাশিস দাস ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৫ সেপ্টেম্বর হাবিব মিলন রাজকে আটক করে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করেন। রাজ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

হাবিব মিলন রাজ জানিয়েছে, তিনি পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ও ওবার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি খুলনায় এসে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে শিববাড়ি এলাকায় কেনাকাটা করতে যান। সেখানে তার স্ত্রীর ছোট বোনের বান্ধবী রিতুর সাথে দেখা হয়। এ সময় তার স্ত্রী ২৭ জানুয়ারি বাসায় জন্মদিনের দাওয়াত দেয় রিতুকে।

এদিন রিতু তার বন্ধু সোহেলকে সাথে নিয়ে এসেছিল। এদিন রিতু তাদের জানায়, মিলন নামে এক ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এ বিয়েতে সে রাজি নয়। মিলন ভিডিওকলে তাকে ৩০ লাখ টাকা দেখিয়েছিল। এ টাকা ভাগিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করে রিতু। রিতু তার হবু স্বামী মিলনকে পরিকল্পনা অনুযায়ী তার অভয়নগরের বাসায় নিয়ে আসেন।

এরপর রিতু, সালাম, সুরাইয়া সকলে মিলে মিলনকে আটক রেখে তার পিতা, দুলাভাই ও বন্ধুর কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা নিতে গিয়ে শাহিন পুলিশের হাতে আটক হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিলনকে উদ্ধার ও রিতুসহ অন্যদের আটক করে পুলিশ।