প্রসঙ্গ আইনগত অক্ষমতা বা লিগ্যাল ডিজাবিলিটি
মুহাম্মদ মনজিলুল আমিন

প্রসঙ্গ আইনগত অক্ষমতা বা লিগ্যাল ডিজাবিলিটি

মুহাম্মদ মনজিলুল আমিন : কোন ব্যক্তি যদি কোন কাজ (act) করতে আইনগত অক্ষম হয় তবেই তাকে আইনগতভাবে অক্ষমতা (Legal Disability) বলা হয়। আইনগতভাবে অক্ষম ব্যক্তি কারা তা জানার জন্য প্রথমে বাংলাদেশের চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ১১ ধারার দিকে তাকাতে হবে। সেখানে বলা আছেন কোন ব্যক্তি যদি পাগল, নাবালক বা আইনদ্বারা অযোগ্য হয় তবেই চুক্তি করতে পারবে না। এখান থেকে কারা আইনগতভাবে সক্ষম ব্যক্তি সেটার ধারনা পাচ্ছি। এক্ষেত্রে, সাবালকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুসারে ১৮ বছরের অনূর্ধ্ব ব্যক্তিকে সাবালক হিসাবে বিবেচিত হবে। এছাড়াও তামাদি আইনের ৬ নং ধারায় আইনগতভাবে অক্ষম ব্যক্তি কারা সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

আইন সর্বদা বিলম্বকে ঘৃণা সহকারে পরিহার করে। এটিকে ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় Lax Dilatiunes Samper Exhorred অর্থাৎ নিজের অধিকার সম্পর্কে যে ব্যক্তি অসচেতন আইন তাকে সমর্থন বা সাহায্য করে না।

এখন প্রশ্ন হলো কোন ব্যাক্তি যদি আইনগতভাবে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে করণীয় কি? সেই সম্পর্কে তামাদি আইন,১৯০৮ সালের ৬,৭,৮,৯ ধারায় বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে তামাদি আইনের ৬ এবং ৭ ধারা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথমত, কোন ব্যক্তি যদি পাগল বা উন্মাদ, নাবালক বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয় সে ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি আইনগতভাবে অক্ষম। ফলে ঐ ব্যক্তি কোন মামলা দায়ের বা মামলার প্রসিডিং বা কোন দরখাস্ত করতে পারবে না।

ধারা-৬ এ ৩টি ক্ষেত্রের কথা বলা আছে।

১. আইনগত অক্ষমতা চলমান থাকাকালে,
২. দ্বৈত অক্ষমতা (Double disability),
৩. আইনগত অক্ষমতা চলাকালে যদি মৃত্যু হয়,

উপরের ক্ষেত্রসমূহে এই ধারা প্রযোজ্য হবে।

এখন মূল আলোচনায় প্রবেশ করি, কোন ব্যক্তি যদি পাগল কিংবা নাবালক কিংবা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয় সেক্ষেত্রে যতদিন পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি সুস্থ না হচ্ছে বা আইনগতভাবে সক্ষম না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তামাদি গণনা হবে না। যদি ঐ সকল অক্ষমতা চলমান থাকে সেক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির ৪৮ ধারা ও ১ম তফসিলের ৩য় কলাম অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারিত হবে।

আবার যদি এমন হয় যে, একই সময় দুই বা ততোধিক অক্ষমতায় ভুগছেন সেক্ষেত্রে ঐ ব্যাক্তি যেদিন থেকে অক্ষমতা থেকে মুক্তি পাবেন সেদিন থেকে তামাদি গণনা শুরু হবে।

এছাড়া যদি কোন ব্যক্তি মামলা বা প্রসিডিং বা দরখাস্ত দাখিল করার অধিকারী, তবে তিনি যদি মারা যান সেক্ষেত্রে তার আইনগতভাবে সক্ষম উত্তরাধিকারীগণ উক্ত মামলা বা প্রসিডিং বা দরখাস্ত পেশ করতে পারবেন।

পাশাপাশি, বৈধ প্রতিনিধি আইনগত অক্ষমতায় ভুগলে সক্ষমতা অর্জনের পর তামাদি গণনা শুরু হবে।

আবার, ধারা-৭ অনুসারে, যেখানে একাধিক ব্যক্তি বা বাদি আইনগত অক্ষমতার জন্য কোন ডিক্রি সম্পাদন করতে না পারে সেক্ষেত্রে ঐ সকল ব্যক্তি বা বাদিগণের মতামত বা অনুমতি ছাড়াই ডিক্রি সম্পাদন করতে পারবে। এখানে ‘Cy-Pres’ নীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।