বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈবাহিক ধর্ষণ: আদালতের রায় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা 
ফাইজুল ইসলাম

জনস্বার্থ মামলার বাস্তবিক প্রয়োগ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম জনস্বার্থমূলক মামলা ধারণার প্রচলন শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে, অর্থাৎ ১৮৬০ সালের দিকে ‘আইনগত সহয়তা পাওয়ার’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ‘জনস্বার্থমূলক মামলা’ শব্দটি ব্যবহার হয় ষাটের দশকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত সহয়তা পাওয়ার আন্দোলনটি ছিল সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, দক্ষ ও অত্যন্ত আগ্রহী কিছু আইনজীবীর প্রচেষ্টার ফসল।

ভারতে জনস্বার্থমূলক মামলা ‘সোশ্যাল অ্যাকশন লিটিগেশন’ নামে পরিচিতি। ভারতের বিচারপতি সি. জে মহাজন একটি মামলায় রায়ে বলেন (বিহার রাজ্য বনাম কামেশ্বর সিঃ এ আই.আর ১৯৫২ এস.সি. ২৫২) “জনস্বার্থ” ধারণাটির কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়, এর কোনো স্থির অর্থ নেই, বরং এটি সম্প্রসারণশীল এবং একেক দেশে এই শব্দটির একেক রকম ব্যাখ্যা হতে পারে।

সুতরাং “জনস্বার্থ” ধারণাটির এমন কোন পূর্ব নির্ধারিত পরিধি বা সীমারেখা নেই, যার মধ্যে পড়লেই কেবলমাত্র কোনো বিষয়বস্তু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে পরিগণিত হতে পারে। প্রত্যেকটি মামলার প্রেক্ষিত ও পরিস্তিতিই নির্ধারণ করে তার বিষয়বস্তু জনস্বার্থমূলক হবে কিনা।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২এর বিধিবিধান এবং দেশ-বিদেশের নজিরসমূহের ফলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরাও দীর্ঘদিন ধরে লোকাস্ স্ট্যান্ডই অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে আসছিল যা ছিল জনস্বার্থে মামলার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা।

‘বেনজির ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান’ (পি. এল. ডি ১৯৮৮এস. সি ৪১৬) মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানে জনস্বার্থ মূলক মামলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। উক্ত মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, “প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করার জন্য জীবন যাপনের পর্যাপ্ত মান অপরিহার্য, আইনের শাসনকে অবশ্যই এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করতে হবে যা মর্যদা ও আকাঙ্খাসহ বেঁচে থাকতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে।”

‘মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ’ মামলায় আপীল বিভাগ বলেন- “সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি” কথাটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বোঝায় না বরং এটা জনসাধারণ পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থাৎ জোটবদ্ধ বা সমষ্টিগত ব্যক্তিত্বকে বোঝায়।

সমাজের দরিদ্র, নিরক্ষর, দুস্থ,সচেতন জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনস্বার্থমূলক মামলার সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সমষ্টিগতভাবেও জনস্বার্থমূলক মামলার মাধ্যমে অসহায় বা সুবিধাবঞ্চিত কোন জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রয়োগ আদায় করা যায়। কিছু উদাহরণের মাধ্যমে জনস্বার্থমূলক মামলা বা জনস্বার্থে মামলা বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।

বিনা নোটিশে ও বিকল্প পুর্নবাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই বস্তি উচ্ছেদের মামলা [আইন ও সালিশ কেন্দ্র বনাম বাংলাদেশ সরকার, ১৯ বি এল ডি (এইচ সি ডি) (১৯৯৯) ৪৮৯] একটি উদাহরন; পরিবেশ সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থমূলক মামলার আর একটি উদাহরণ হলো ফ্যাপ ২০ মামলা।

ওই মামলায় একটি বিতর্কিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ফলে একটি বিশেষ এলাকার পরিবেশে সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। পরিবেশগত অধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে আদালতের হস্তক্ষেপ প্রার্থনার ক্ষেত্রে জনস্বার্থমূলক মামলা সবচেয়ে উপযোগী পন্থা। কারণ পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এলাকার সমগ্র জনগোষ্ঠী দুর্ভোগের শিকার হয় কোনো একক বিশেষ ব্যক্তি নয়।

জনস্বার্থমূলক মামলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। শিশুদের প্রাণহানীকর প্যারাসিটামল সিরাপ সংক্রান্ত (সৈয়দ বোরহান কবীর বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য (রিট আবেদন নং ৭০১/১৯৯৩ ) মামলা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ;

আদালতের স্বপ্রণোদিত এখতিয়ার জনস্বার্থমূলক মামলার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বৈশিষ্ট্য। যে কোনো উপায়ে বিচারক এমন কোনো ঘটনা যদি জানতে পারেন যার ফলে জনস্বার্থ লংঘিত হয়েছে বা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তিনি নিজেই সেই লংঘনকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা শুরু করতে পারেন। যেমন- রাষ্ট্র বনাম জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা ও অন্যান্য [৪৫এলআর (১৯৯৩) ৬৪৩] যেখানে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে নজরুল ইসলামের ১২ বছর ধরে বিনা বিচারে আটক থাকার খবর জানতে পারেন এবং স্বপ্রণোদিতভাবে তার মুক্তির ব্যাপারে রুল জারী করেন।

বাংলাদেশে জনস্বার্থ মামলার ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ১৯৯৭ সালে ‘মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ’ মামলা থেকে জনস্বার্থ মামলার আইনগত ভিত্তি তৈরি হয়। এই মামলার রায়ে বলা হয়, জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো ঘটনায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনি প্রতিকার চেয়ে জনস্বার্থে মামলা করতে পারেন।

‘মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ’ মামলার ঘটনা ছিল, সরকার টাঙ্গাইল জেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে। ফলে বনভূমি ধ্বংস, স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি ও বিপুল জনগোষ্ঠী ভূমিহীন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে মহিউদ্দিন ফারুক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এই মামলার পর বাংলাদেশে জনস্বার্থ মামলার দ্বার উন্মোচিত হয়।

রিট কাকে বলে?

রিট শব্দটির অর্থ হলো আদালত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত বিধান বা আদেশ। রিটের উৎপত্তি ও বিকাশ ইংল্যান্ডে। প্রথমে রিট ছিল রাজকীয় বিশেষাধিকার। রাজা বা রানী বিচারের নির্ধারক হিসেবে রিট জারী করতে পারতেন।

পরবর্তীতে রাজা বা রানীর এই বিশেষ অধিকার সাধারণ নাগরিকদের অনুকূলে চলে আসে। নাগরিকগণ সরকারি কোনো সংস্থার কর্মকর্তাদের আচরণ ও কাজে সংক্ষুব্ধ হয়ে রাজার কাছে আসত এবং রাজা তার বিশেষাধিকার বলে তার অফিসারদের উপর রিট জারী করতেন।

পরবর্তীতে রাজা বা রানীর প্রতিনিধি হিসেবে ইংল্যান্ডের দুধরণের আদালত নাগরিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রিট জারী করত। তা হলো চ্যান্সারী আদালত এবং কিংস বেঞ্চ।

পাঁচ ধরনের রিট আছে-

বন্দী প্রদর্শন রিট: কোনো ব্যক্তিকে সরকার বা অন্য কেউ আটক করলে কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তা জানার জন্য বন্দীকে আদালতে হাজির করার যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাই বন্দী প্রদর্শন রিট।

পরমাদেশ বা হুকুমজারি রিট: কোনো অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার আইনগত দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করে কিংবা ব্যর্থ হয় তাহলে উচ্চতর আদালত যে আদেশের মাধ্যমে উক্ত আইনগত দায়িত্ব পালন করতে উক্ত আদালত বা ট্রাইব্যুনালকে বাধ্য করে তাকে হুকুমজারী রিট বা পরমাদেশ বলে।

নিষেধাজ্ঞামূলক রিট: কোনো অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা ব্যক্তি তার এখতিয়ার বর্হিভূত কাজ করতে উদ্যত হয়েছে কিংবা ন্যায় নীতি ভঙ্গ করতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় উচ্চতর আদালত যে আদেশের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে ঐ কাজ করা থেকে বিরত রাখেন তাকে নিষেধাজ্ঞামূলক রিট বলে। নিষেধাজ্ঞামূলক রিটকে বিচার বিভাগীয় রিটও বলা হয়।

উৎপ্রেষণ রিট: দুটি উদ্দেশ্যে উচ্চতর আদালত উৎপ্রেষণ রিট জারী করতে পারে- ক) অধস্তন কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক কৃত ক্ষমতা বহির্ভূত কাজকে বাতিল বা নাকচ করে দেয়া। খ) অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলা শুনানীর জন্য উচ্চতর আদালত নিজেই গ্রহণ করে এ রিট জারী করতে পারে।

কারণ দর্শাও রিট: কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো সরকারি পদ দাবী করে, যে পদের যোগ্যতা তার নাই অথবা অবৈধভাবে যদি কোনো সরকারি পদ দখল করে বসে থাকে, তাহলে উচ্চতর আদালত যে আদেশের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে তার পদ দখলের বা দাবীর কারণ দর্শাও নির্দেশ দিয়ে থাকে তাকে কারণ দর্শাও রীট বলে।

কারো মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে আমাদের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ তা বলবৎ করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাকে কার্যকর করতে পারে।হাইকোর্ট বিভাগের এই এখতিয়ার কে রীট জারীর এখতিয়ার বলে। অর্থাৎ রিট শুধু মাত্র হাইকোর্ট বিভাগ জারী করতে পারে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে ৪৩ এ উল্লেখিত মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত অধিকারবলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য রিট পিটিশন দায়ের করা যায় এবং হাইকোর্ট বিভাগ ১০২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য কতিপয় আদেশ নির্দেশ জারী করতে পারে, যাকে রিট বলে।

জনস্বার্থ মূলক মামলার ভবিষ্যত বিচারকের হাতে ন্যস্ত। অন্তর্নিহিত সুবিবেচনার ক্ষমতার সাথে প্রায়োগিক সর্তকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বর্তমানে করছেনও, যা খুবই প্রশংসার দাবীদার। অন্যদিকে জনস্বার্থে ভূমিকা রাখা আইনজীবীর উপরও বর্তায় এবং অনেক আইনজীবী সে লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বটে।

নাগরিক সংকট বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন আইনে অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উচ্চ আদালতে ‘জনস্বার্থে’ করা মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব মামলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ।

তবে সেসব নির্দেশ বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করাকে আদালত অবমাননা বলে মন্তব্য করছেন আইনজ্ঞরা।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যে কোনো মামলার রায় বা আদেশ সরকারের যে কোনো সংস্থাসহ যে কেউ মানতে বাধ্য। না মানলে আদালত অবমাননা হবে। আদালত কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বললে সেটা করতেই হবে। তবে রায়ে কোনো ব্যক্তি বা কোনো সংস্থা সংক্ষুব্ধ হলে আপিলে যেতে হবে। এর বাইরে রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা বা বিভাগের ক্ষমতা নেই উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করার।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (সাবেক রেসকোর্স ময়দান) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থান এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানসহ ঐতিহাসিক সাতটি স্থান চিহ্নিত করতে ২০০৯ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের জনস্বার্থে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত। যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

২০১৯ সালে এক আদেশে মুসলিম বিয়ের কাবিননামার ফরমের ৫ নম্বর কলামে কনের ক্ষেত্রে ‘কুমারী’ শব্দ উঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কুমারী শব্দের স্থলে অবিবাহিত লিখতে বলেন আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, ‘কাবিননামায় কুমারী শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থি।’ ব্লাস্ট, নারীপক্ষ ও মহিলা পরিষদ যৌথভাবে জনস্বার্থে মামলাটি করে।

এর আদেশে বলা হয়, রায় হাতে পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বিবাদীদের (আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা) নিকাহনামার (কাবিননামা) ৫ নম্বর দফা সংশোধন করে কুমারী শব্দটি বাদ দিতে হবে। গত বছরের নভেম্বরে ৩২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি উচ্ছেদ মামলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জলাধার দখল, অবৈধ ইটভাটা, নদী দখল-দূষণ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি জনস্বার্থের মামলা করেছে। যা জনস্বার্থ রক্ষায় একটি মাইলফলক। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্তির পথে মামলা করার আইনসঙ্গত অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, “জনস্বার্থে মামলার উদ্যোগ খুব ভালো কাজ বলে মনে করি। কেননা এটা করা হয় জনগণের স্বার্থে মানুষের ভালোর জন্যই কিন্তু আদালত রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন। মানুষ যাতে অন্যায়ভাবে সাজা না পায়, কেউ যেন বিনা দোষে হাজতবাস না করেন, কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, কেউ যেন তার ন্যায্য সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। মোদ্দা কথা হলো এটা কিন্তু ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নিজের স্বার্থে নয়, দেশের ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এ মামলাগুলো হচ্ছে। মামলাটিতে জয়ী হয়েছে। এ জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে।”

জনস্বার্থে গত ১৮ বছরে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উচ্চ আদালতে ৩২০টি মামলা করেছে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ৮৫টি মামলায় জনস্বার্থ রক্ষায় রায় এসেছে। অন্তত ২২০টি জনস্বার্থের মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে।

তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, প্রশাসন এবং জনগণ সবাই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। আমাদের সবাইকে এটি জানতে, বুঝতে ও মানতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকে নিষ্ক্রিয়তা ও নেতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দেন। তাই হাইকোর্টের নির্দেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না।

জনস্বার্থে মামলার ক্ষেত্রে আদালতের রায় পাওয়াই শেষ কথা নয়; যাদের জন্য মামলাটি করা হয়েছে তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন কি না, সেটিই শেষ কথা। মামলার চেয়ে জনস্বার্থই যেখানে সবকিছু।

লেখক: ফাইজুল ইসলাম; শিক্ষার্থী, এলএলএম, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র

১. আবু ওবায়দুর রহমান
২. Kazi Mukhlesur Rahman Vs Bangladesh, 26 DLR
৩. এডভোকেট মোজাহিদুল ইসলাম সুমন
৪. এ যে আর খান রবিন
৫. দৈনিক সমকাল, ১২ আগষ্ট, ২০২৩
৬. ভোরের কাগজ, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩
৭. দৈনিক জনকণ্ঠ, ৫ আগষ্ট, ২০২৩