পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ: মামলা দায়েরের নির্দেশ ম্যাজিস্ট্রেটের

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে একটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলার প্রেক্ষাপটে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের সময় আসামি পুলিশের নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিলে ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আমলে নেন এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

চাঁদপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে গত ১৬ ডিসেম্বর একটি ডাকাতি মামলায় (জি আর নং–৩১৫/২৫) তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখিত খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় আসামি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।

আসামি তার জবানবন্দিতে বলেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। গ্রেপ্তারের স্মারকপত্রে আসামিকে সুস্থ দেখানো হলেও এবং পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট নিজ দায়িত্বে আসামিকে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

এরপর ম্যাজিস্ট্রেট নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুনবিচারকদের উদ্দেশ্যে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির অভিভাষণ মঙ্গলবার

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামির উভয় পায়ের উরুর ওপর একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে। যদিও চিকিৎসা সনদে বলা হয়, আসামির বর্ণনামতে এসব জখম প্রায় চার দিন আগের।

আদালতের মামলা দায়েরের নির্দেশের পর গত ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে তদন্তের জন্য ১৫ দিনের সময় প্রার্থনা করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সময়ের আবেদন নাকচ করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়েরের নির্দেশ পুনর্ব্যক্ত করেন।

আদালতের আদেশ পর্যালোচনায় বলা হয়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য অপরাধ। ফলে আইন অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনায় মামলা দায়ের ছাড়া তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ গতকাল ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন নতুন করে সামনে এনেছে।