পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ
আইনি নোটিশ

মৌলিক আইনসমূহ বাংলায় অনুবাদ করতে ১০ আইনজীবীর নোটিশ

আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলনের স্বার্থে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধিসহ দেশের মৌলিক আইনসমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic Text) প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রেজিস্ট্রি যোগে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ নোটিশ প্রেরণ করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, মীর ওসমান বিন নাসিম, মো. আসাদ উদ্দিন, মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আল রেজা মো. আমির, আবদুল্লাহ হিল মারুফ ফাহিম, জি এম মুজাহিদুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম।

নোটিশে বলা যা হয়

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার জন্য আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি। স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের ইউনেস্কো (UNESCO) ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে ‘বাংলা’ কে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের বিধানকে পূর্ণরূপে কার্যকর করার উদ্দেশে ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ৩ ধারা মতে বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় হতে হবে। এই আইনি বিধান সত্ত্বেও দেশের আদালতের অধিকাংশ রায় ও আদেশ এবং অন্যান্য কার্যাবলী ইংরেজিতে প্রদান করা হয়।

১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩ অনুসারে পরিচালিত। আইনের ১০ ধারায় বাংলা একাডেমির কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। একাডেমির অন্যতম কার্যাবলী হচ্ছে – জীবনের সর্বস্তরে ও জ্ঞানচর্চার সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা কয়া এবং এই উদ্দেশে গবেষণা ও অনুবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করা।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আইন কমিশন গঠিত হয়। বর্তমানে এটি আইন কমিশন আইন, ১৯৯৬ দ্বারা পরিচালিত হয়। এই আইনের ৬ ধারায় কমিশনের কার্যাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারা মতে আইন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব হল- আইন শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে গ্রহণীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করা।

আদালতের যাবতীয় কার্যাবলী আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। আদালতের কার্যক্রম সক্রান্তে মৌলিক আইনসমূহ হল- দণ্ডবিধি, ১৮৬০; সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২; চুক্তি আইন, ১৮৭২; সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭; দেওয়ানি আদালত আইন (সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট), ১৮৮৭; সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২; ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮; দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮; তামাদি আইন, ১৯০৮; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলস, ১৯৮৮; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস, ১৯৭৩; ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস (প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর অব সাবর্ডিনেট কোর্টস), ২০০৯; সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস। অধিকাংশ আইন বৃটিশ আমলে এবং ইংরেজি ভাষায় প্রণীত।

আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই আইনসমূহের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। এই আইনসমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ব্যতীত আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন ও অযৌক্তিক। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলনের স্বার্থে এই মৌলিক আইনসমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ অত্যাবশ্যক।

এমতাবস্থায় মৌলিক আইনসমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে। একই সাথে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকলে সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।