শিশুর ডিএনএ পরীক্ষায় মিললো ধর্ষণের সত্যতা, কারাগারে আইনজীবী
কারাগার (প্রতীকী ছবি)

প্রকৃত আসামির পরিবর্তে জেল খাটছেন নিরাপরাধ কলেজ ছাত্র!

আসামির বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে জেল খাটছেন আল আমিন নামের এক নিরাপরাধ কলেজ ছাত্র। বিষয়টি আদালতে গড়ালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৭ জুন) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে আল আমিনকে গ্রেফতার করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এ সময় ওই কিশোরী ও তার ভাগ্নে বাড়িতে একা ছিল। এ সুযোগে আবুজার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান তারা।

ওই দিন রাতে কিশোরীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচার চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।

দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক।

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের মো. হান্নানের পুত্র। আর গত ১৮ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা আল আমিন গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজির পাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। তাকে গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আল আমিন ২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুল অধ্যয়নরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ আল আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর ন্যায় বিচারপ্রাপ্তিতে মানবিক সহযোগিতা চেয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন। এ বিষয়ে কোন সাড়া না পেয়ে গত ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার ভাই আলী হোসাইন।