মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্য তিন আসামি হলেন, মো. ওহাব মোল্লা, মো. মাহতাব বিশ্বাস ও মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা।
আজ রোববার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
এটি ট্রাইব্যুনালের ৫২তম রায়। এদিন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। ১৬৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথমাংশ পাঠ করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দ্বিতীয়াংশ পাঠ করেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। রায় ঘোষণাকালে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা আসামির কাঠগড়ায় বসা ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মো. সাহিদুর রহমান, তাপস কান্তি বল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম।
পরে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ২১ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন।
গত ১১ মে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। আসামিরা হলেন— মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা, মো. ওহাব মোল্লা, মো. মাহতাব বিশ্বাস, মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা ও মো. নওশের বিশ্বাস। এর মধ্যে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকা আমজাদ হোসেন মোল্লাকে ২০১৭ সালের ২২ মে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। আর বাকি চারজন ছিলেন পলাতক। তবে পলাতকদের মধ্যে নওশের বিশ্বাস নামে এক আসামির মারা গেছেন।
প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে, মামলায় চার আসামির মধ্যে আমজাদ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিনজন পলাতক। এর আগে মামলায় মোট আসামি ছিলেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে নওশের নামের একজন মারা গেছেন।
২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়, ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল তা শেষ হয়। যশোর জেলা প্রশাসকের দেওয়া রাজাকারদের তালিকাতেও আসামিদের নাম রয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ
১৯৭১ সালের ৩ ভাদ্র দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা। সেখানে তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে ৬ ভাদ্র দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে ময়নাকে গুলি করে হত্যা করেন মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা।
১৯৭১ সালের ২০ জুলাই দুপুর ১টার দিকে আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন দুপুর ১২টায় তাকে থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে করে হত্যা করা হয়।
আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস ও মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তিন দিন নির্যাতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ কুয়ায় ফেলে দেন।