মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১৭ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার মামলায় কক্সবাজার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক ৭ সদস্যের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলাটির আসামীদের জামিন বাতিল ও রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন।
জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা কক্সবাজার জেলা পুলিশের ডিবি’র সাবেক সদস্যরা হলেন- এসআই মোঃ আবুল কালাম আজাদ, এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান, এএসআই মোঃ গোলাম মোস্তফা, এএসআই মোঃ ফিরোজ, এএসআই আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আজম এবং কনস্টেবল আল আমিন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদ এর পুত্র মোঃ আবদুল গফুর (৩২) কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য কক্সবাজার শহর থেকে অপহরণ করে টেকনাফ নিয়ে যায়।
পুলিশ সদস্যরা অপহৃত মোঃ আবদুল গফুরকে মারধর করে ‘ক্রস ফায়ার’ এর হুমকি দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মোঃ আবদুল গফুরের স্বজনেরা ডিবি পুলিশের সদস্যের ১৭ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিলে অপহরণ অবস্থা থেকে মোঃ আবদুল গফুরকে ডিবি পুলিশ ছেড়ে দেয়।
পরে বিষয়টি মোঃ আবদুল গফুরের স্বজনেরা টেকনাফের লম্বরী সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে জানায়। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে চেকপোস্টের সেনা সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করে ১৭ লাখ নগদ টাকা পান। এ সময় এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান মাইক্রোবাস থেকে পালিয়ে গেলেও বাকী ৬ পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় মোঃ আবদুল গফুর বাদী হয়ে মুক্তিপণ আদায়কারী ৭ পুলিশ সদস্যকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ ধারায় টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৩৮/২০১৭ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৭৮৯/২০১৭ (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১০২১/২০১৯ ইংরেজি। মামলার পর উল্লেখিত ৭ পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয়।
মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে ৭ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে। মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এছাড়া মামলায় আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সোমবার সম্পন্ন করা হয়।
আসামী ৭ পুলিশ সদস্য বিভিন্ন সময়ে আদালত থেকে জামিন লাভ করে। সোমবার বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন এবং আসামীদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।